Summary
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে বল প্রয়োগ করি, যা আমাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত।
- প্রয়োগের উদাহরণ:
- মুখ ধোয়ার জন্য পানির কল চালাতে বল প্রয়োগ。
- চেয়ার টানতে বল প্রয়োগ।
- ড্রয়ার ওপেন ও ক্লোজ করতে বল প্রয়োগ।
- বাতি জ্বালাতে সুইচ অন করাতে বল প্রয়োগ।
- ফুটবল এবং ক্রিকেটে বল মারতে বল প্রয়োগ।
বস্তুর ওপর বলের বিভিন্ন প্রভাব রয়েছে, যেমন:
- রাবার বা মার্বেল বাঁকা হলে বা চাপা দিলে আকৃতি পরিবর্তন হয়।
- মার্বেল ধাক্কা দিলে গতির পরিবর্তন ঘটে।
- স্থির বস্তুকে প্রথমে গতিশীল করা যায় এবং চলন্ত বস্তুর গতি বাড়ানো, কমানো বা থামানো যায়।
সারসংক্ষেপে বলের প্রয়োগে:
- স্থির বস্তুকে গতিশীল করা হয়।
- গতিশীল বস্তুর গতি বাড়ানো বা কমানো হয়।
- গতির দিক পরিবর্তন করা হয়।
- বস্তুর আকৃতি পরিবর্তন হয়।
এছাড়াও, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও যানবাহনে বলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
তোমরা কি জান বে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জানা বা অজানা বিভিন্নভাবে আমরা বল প্রয়োগ করে থাকি। তোমরা ভাবছ এই বলটা আবার কী? সকাল থেকেই শুরু হয় আমাদের নানাভাবে বিভিন্ন বস্তুর ওপর বলের প্রয়োগ। ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার জন্য পানির কল ছাড়তে বা টিউবওয়েলে চাপ দিতে আমাদের বল প্রয়োগ করতে হয়। এমনকি পড়তে বসার সময় চেয়ারকে টেনে বসতেও বল প্রয়োগ করতে হয়। আবার ধর, তোমার পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে তোমার জ্যামিতি বক্সটি আছে। এটিকে বের করতে এবং বের করার পর পুনরায় ড্রয়ারটিকে বন্ধ করতে ড্রয়ারটিকে যথাক্রমে টান বা ধাক্কা দিতে হয়। তুমি নিশ্চয়ই তোমার ঘরের বাতিটি জ্বালানোর জন্য সুইচটি অন করেছ। এটিতেও কিন্তু বলের প্রয়োগ হয়েছে। কাউকে কি কোকের ক্যান খুলতে দেখেছ। এটিও কিন্তু বল প্রয়োগ। ফুটবলে লাথি দেওয়া বা ক্রিকেট বলে ব্যাট দিয়ে আঘাত ও বল। উপরোক্ত ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে দুটি জিনিস জড়িত- ধাক্কা বা টান। এই ধাক্কা বা টানই হলো বল।

বস্তুর ওপর বলের বিভিন্ন প্রভাব
তোমার তো নিশ্চয়ই একটি রাবার আছে। তুমি কি কখনও দেখেছ একে বাঁকালে, মোড়ালে, চেপে ধরলে বা টানলে এর আকৃতির কিরূপ পরিবর্তন হয়। এই বাঁকানো, মোচড়ানো, চাপা, লম্বা করার চেষ্টাও হলো একই বস্তুর ওপর বল প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতি। এগুলোর কি চিত্র অঙ্কন করতে পারবে?
আরেকটি মজার ঘটনা লক্ষ্য কর। মার্বেল দিয়ে কি কখনো খেলেছ? প্রথমে মার্বেলগুলো সামনে ছড়িয়ে রাখতে হয়। পরে একটু দূর থেকে অন্য একটি মার্বেল দ্বারা ছড়ানো মার্বেলগুলোর মধ্যে কোনো একটিকে আঘাত করার জন্য লক্ষ্য স্থির করতে হয়। যখন তুমি তোমার হাতের মার্বেলটি ছুড়বে তখন এটি তোমার লক্ষ্যের মার্বেলটিকে আঘাত করলে তুমি কী দেখতে পাবে? দেখবে মার্বেলটি আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার পর স্থির অবস্থা থেকে গতিশীল হয়েছে। হয়ত দেখবে এটি আবার অন্য কোনো স্থির মার্বেলকে আঘাত করেছে। অথবা মোট একই গতিতে চলমান রয়েছে। গতিপ্রাপ্ত মার্বেলটির ওপর কোনো বল প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই গতি চলতে থাকবে। অন্য কোনো বল না থাকলেও মাটির ঘর্ষণ বলই এক সময় মার্বেলটিকে থামিয়ে দেয়।

আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। কোনো একটা মাইক্রোবাস হয়ত রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ল। তখন হয়তো একে পুনরায় চালু করার জন্য ধাক্কা দেওয়া প্রয়োজন। তখন একজন হয়তো একে ধাক্কা দিলে এটি নাও নড়তে পারে। কিন্তু ৪/৫ জন একসাথে ধাক্কা দিলে এটি নড়তে পারে এমনকি চলতেও পারে। এখানে বল প্রয়োগের ফলে স্থির বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে বা ঘটতে চায়।
এখন বলতে পারবে এখানে কী কী ঘটনা ঘটেছে। বলের প্রভাবে মার্বেলের গতির বিভিন্ন পরিবর্তন হলো। একইভাবে সাধারণত বল প্রয়োগে স্থির বস্তুকে গতিশীল করা যায়, গতিশীল বস্তুর গতি বাড়ানো বা কমানো যায় এবং গতিশীল বস্তুকে থামানো যায়। উপরের উদাহরণগুলো থেকে আমরা নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
বল প্রয়োগের ফলে-
- কোনো স্থির বস্তু গতিশীল এবং গতিশীল বস্তু স্থির হয় বা হতে চায়।
- চলন্ত বস্তুর গতি বাড়তে বা কমতে পারে।
- চলন্ত বস্তুর গতির দিক পরিবর্তন হয়।
- কোনো বস্তুর আকার বা আকৃতি পরিবর্তন হয়।
অনুরূপভাবে বলা যায়, যা কোনো স্থির বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় অথবা যা কোনো গতিশীল বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তার গতি, আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাই বল।
বৈদ্যুতিক সুইচ 'অফ' বা 'অন' করা, কোকের ক্যানের মুখ খোলা, মসলা পেষা, বোঝা তোলা, ঢিল ছুঁড়ে মারা, নৌকা বাওয়া, চলাফেরা করা, কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বলের ব্যবহার দেখা যায়। এমনকি মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে ঠেলাগাড়ি, রিকশা প্যাডেল সবকিছুতেই বলের প্রয়োগ দেখা যায়।